ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

পেকুয়ার একমাত্র অডিটরিয়মের সংস্কার না করায় বেহাল দশা

pekua,,পেকুয়া প্রতিনিধি :::

ভূতের বাড়িতে পরিণত হয়েছে পেকুয়া উপজেলার একমাত্র অডিটরিয়ামটি। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়া ও নির্মাণ ত্রুটির কারণে অডিটরিয়ামটির এমন দশা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। একমসয়ের সভাসমিতি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মুখরিত এ অডিটরিয়ামটিতে এখন শুনশান নীরবতা। ভেতরে পোকা মাকড় ও বড় বড় সাপের বসবাস। ভেতরের অবস্থা দেখলে মনে হবে এটি একটি ভূতের বাড়ি। আসবাবপত্র ও মঞ্চ ভেঙ্গেচুরে চুরমার হয়ে গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে ভেতরের সব ইনস্ট্রুমেন্ট। পেকুয়ার একমাত্র অডিটরিয়মটির বেহাল দশায় হতাশ সংস্কৃতি কর্মী, শিক্ষার্থী ও সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ। স্থানীয় সুধীমহল জানিয়েছেন, একসময় অডিটরিয়ামটি চালু থাকা অবস্থায় পেকুয়ার সংস্কৃতির বিকাশ হলেও এখন তা অনেকটা থমকে আছে। তারা জানান, অডিটরিয়ামটি সংস্কার করার জন্য বিভিন্ন সময় প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়ে এলেও অডিটরিয়মটি সংস্কারে কোন পদক্ষেপ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। জানা যায়, ২০০৬ সালে পেকুয়া বিজনেস ম্যানেজম্যান্ট ইনস্টিটিউশনের অধীনে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর এ অডিটরিয়ামটি নির্মাণ করে। অডিটরিয়ামটি পেকুয়া বিএম অডিটরিয়াম নামে পরিচিত। এটি পেকুয়া বিজনেস ম্যানেজম্যান্ট ইনষ্টিটিউশনের মালিকনাধীন অটিরিয়ম হলেও তা ব্যবহৃত হত আমভাবে। একহাজার দর্শনার্থীর বসার সুবিধা, মঞ্চ, সাউন্ড সিষ্টেম ও যাবতীয় সুযোগ সুবিধা ছিল এ অডিটরিয়ামে। বছরজুড়েই এ অডিটরিয়ামটি বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মুখরিত ছিল। চলত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সভাও। বিনিময়ে বিএমআই কলেজকে নির্ধারিত ফি পরিশোধের নিয়ম ছিল। কিন্তু চালু হওয়ার কয়েক বছরের মাথায় সংস্কারের প্রয়োজন হলে কর্তৃপক্ষ আর সংস্কারের উদ্যোগ নেয়নি।

স্থানীয়রা জানান, অডিটরিয়ামটি সংস্কার না হওয়ায় তা ব্যবহার বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এরফলে ধীরে ধীরে তা ব্যবহারের একেবারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিএমআই কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, বর্তমানে অডিটরিয়ামের ভিতরে এমনই নাজুক অবস্থা হয়েছে যে, কোন সাধারণ মানুষ সেখানে প্রবেশ করলে ভয়ে বেহুশ হয়ে পড়বে। অডিটরিয়ামের ভেতরে এখন সাপের বসবাস। মঞ্চ ভেঙ্গে গেছে। অধিকাংশ আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। চুরি হয়ে গেছে প্রায় সব ইনস্ট্রুমেন্ট। এভাবে সংস্কার না করে অডিটরিয়ামটি রেখে দেয়া হলে কিছুদিন পরে ভবনটিই ভেঙ্গে পড়তে পারে বলে আশংকা করেন তারা। অডিটরিয়ামটি খুব শিঘ্রই সংস্কার করে পুনরায় চালুর দাবি জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। বিএমআই ইনস্টিটিউশনের পরিচালনা কমিটির সদস্য নুরুল ইসলাম বিএসসি, আবুল হাশেম ও জামিলা নেওয়াজ জানান, অডিটরিয়ামটি নির্মাণ ত্রুটির কারণে তা নির্মাণের কয়েকবছর পর থেকে নষ্ট হতে শুরু করে। আমরা উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরকে বিষয়টি জানালেও তারা কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় তা বর্তমানে একেবারেই ব্যবহার অনুপুযোগী হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি শাহনেওয়াজ আজাদ জানান, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের পিএস ও পেকুয়ার সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম জাকারিয়া পেকুয়া সফরে এলে পেকুয়ার শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকরা তার কাছে অডিটরিয়মটি সংস্কারের জন্য সহযোগিতা চাইলে তিনি শতভাগ সহযোগিতার আশ্বাস দেন। কিন্তু পরবর্তীতে তা আর কিছুই হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পেকুয়া উপজেলা চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ রাজু জানান, পেকুয়ায় এ অডিটরিয়ামের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। কিন্তু তা অকেজো হয়ে যাওয়ায় সবকিছুই যেন থমকে গেছে। অধিক মানুষের কোন সভা করতে চাইলে পেকুয়ায় আর কোন সুযোগ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাংস্কৃতিক চর্চা সমুন্নত রাখার স্বার্থে হলেও অডিটরিয়ামটি সংস্কার করা এখন সময়ের দাবি। তিনি এ অডিটরিয়ামটি সংস্কার করার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান। এ বিষয়ে শহীদ জিয়া বিএমআই ইনষ্টিটিউশনের অধ্যক্ষ ফরিদুল আলম চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান কলেজের পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সহযোগিতায় অডিটরিয়ামটির সংস্কারের জন্য শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু কর্র্তৃপক্ষ কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় অডিটরিয়ামটি অচল হয়ে আছে। অডিটরিয়ামটি অচল হওয়ায় কলেজের কালচারাল প্রোগ্রামগুলো যথাযথ করা সম্ভব হচ্ছেনা বলে জানান তিনি।

পাঠকের মতামত: